অনলাইন ডেস্ক | ২৬ অক্টোবর ২০২২ | ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
ডেঙ্গুতে কেন মৃত্যু বেশি
চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর ঘটনায় শঙ্কা বাড়ছে। গত দুই বছরের রেকর্ড ভেঙে এ বছর ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। আক্রান্ত হওয়ার পরে দেরি করে হাসপাতালে আসাকে রোগী মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করছেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আগে থেকে জটিল দুরারোগ্য ব্যাধি থাকলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানান তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫০ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৭১৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৯ হাজার ৪৬৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩ হাজার ৪১৬ জন। তবে সরকারের এই তালিকাভুক্ত হাসপাতালের বাইরে অন্য হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য থেকে যাচ্ছে হিসাবের বাইরে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে মারা যাওয়া ১১৮ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ১২ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা গেছেন ১১ জন, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১০ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে একজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনজন মারা গেছেন। ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন, ইবনে সিনা হাসপাতালে চারজন, স্কয়ার হাসপাতালে পাঁচজন, শমরিতা হাসপাতালে একজন, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে চারজন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে তিনজন, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে দুজন মারা গেছেন। শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিআরবি হাসপাতালে দুজন রোগী মারা গেছেন। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে দুজন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে তিনজন মারা গেছেন। এ ছাড়া পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আইচি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে একজন করে রোগী মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। সরকারি হিসাবে ঢামেক হাসপাতালে ১১ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সবচেয়ে সংকটাপন্ন রোগীদের ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে এখানে রেফার্ড করা হয়। অধিকাংশ রোগী জটিল অবস্থায় আসেন। তাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার সময় পাওয়া যায় না। ক্যান্সারের শেষ ধাপে এ রকম রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে মারা গেছেন। একজন গর্ভবতী নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেরা রিভিউ করে দেখেছি এ পর্যন্ত হাসপাতালে মারা যাওয়া ১৮ জন রোগীর মধ্যে ১৭ জনই দেরিতে এসেছেন নয়তো শারীরিক জটিলতা বা দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল। কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে এমন রোগীও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢামেকে এসেছেন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকাতে কমিউনিটির মানুষের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মী-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও আরও সতর্ক হতে হবে।’ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন-নবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে এ হাসপাতালে ১১ জন মারা গেছে। মারা যাওয়া অধিকাংশ রোগী দেরিতে এসেছে। আর বাকিদের আগে থেকেই লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগ ছিল। এর সঙ্গে ডেঙ্গু হওয়ায় রোগীর পরিস্থিতি সংকটাপন্ন করে তোলে। কেরানীগঞ্জ থেকে একজন রোগী রাত ৯টা ১৫ তে আমাদের হাসপাতালে এসেছেন, রাত ১০টায় তিনি মারা যান। কামরাঙ্গীরচর থেকে একজন রোগী রাত ৩টায় এসে ভোর ৪টায় মারা যান। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সময়টুকুও পাওয়া যায় না। বারবার বমি হলে কিংবা শরীরে ছোপ ছোপ রক্ত জমাট বাঁধা চোখে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেন তিনি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক বাড়ছে অভিভাবকদের মাঝে। ঘুমন্ত অবস্থায় কিংবা খেলাধুলারত অবস্থায় অনেক শিশু এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১০ জন রোগী মারা গেছে। রোগী মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রক্তক্ষরণ রোগী মৃত্যুর বড় কারণ। এ হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীদের অনেকের ফুসফুসে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই পরিস্থিতি তৈরি হলে রোগী বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। কয়েকজন রোগীর পেটে রক্তক্ষরণ হয়েছে। অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হঠাৎ হার্ট ব্লক হয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পরে এই ১০ জন শিশুর এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে আইইডিআর-এর পরিচালককে প্রধান করে কমিটি করেছি। তারা এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে দেওয়া তথ্যে দেরিতে আসা রোগীদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি বলে জানতে পেরেছি। জ্বর হলে ডেঙ্গু টেস্ট করা এবং আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অধিদফতরের লাইফ স্টাইল হেলথ এডুকেশন ব্যুরো এবং এমআইএস-এর সাহায্যে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করছি। এ ছাড়া অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রামের মাধ্যমেও মানুষকে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিধনে চিরুনি অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গুর উৎসস্থল আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডেঙ্গু ঠেকাতে সবাইকে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২
24news.com.bd | Online Desk